রাজ্যের পাশে থাকার বার্তা জেটলির
প্রদীপ ধরানোর সময় মোমবাতিটা তাঁর দিকেই বাড়িয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিও সাগ্রহে সেই মোমবাতি দিয়েই প্রদীপ জ্বালিয়ে সূচনা করলেন দু’দিনের ‘আন্তর্জাতিক শিল্প সম্মেলন
প্রদীপ ধরানোর সময় মোমবাতিটা তাঁর দিকেই বাড়িয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিও সাগ্রহে সেই মোমবাতি দিয়েই প্রদীপ জ্বালিয়ে সূচনা করলেন দু’দিনের ‘আন্তর্জাতিক শিল্প সম্মেলন’-এর। যে সৌজন্যের সুর প্রথমেই মুখ্যমন্ত্রী বেঁধে দিলেন, গোটা অনুষ্ঠানে সেই সৌজন্যই বারে বারে ফেরত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে মঙ্গলবারই যিনি কলকাতায় পৌঁছে গিয়েছিলেন।
এ দিন জেটলি একটি শব্দকে বহু বার ব্যবহার করেছেন। সেটি ‘সহযোগিতা’। কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ ভাবে চেষ্টা করলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন যে ঘটবেই সে কথা মনে করিয়ে দেন তিনি। রাজ্যের আর্থিক উন্নয়নে কেন্দ্র সব সময় পাশে দাঁড়াবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন মোদী সরকারের দু’নম্বর ব্যক্তি জেটলি। কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যকে কী ভাবে শিল্পপতিদের কাছে তুলে ধরা যেতে পারে তারও একটা রূপরেখা দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, “এ রাজ্যের শিল্পের একটা দীর্ঘ উত্তরাধিকার আছে। ভারতের মধ্যে তো বটেই, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যতম প্রধান শহর কলকাতা। এমনকী, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বার এই শহর। মেধা সম্পদের এই রাজধানীর ইতিহাসও আছে।” এর পরেই তিনি বলেন, “কৃষি, খনির পাশাপাশি এই রাজ্যের শিল্পের একটা দীর্ঘ ঐতিহ্য আছে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে যদিও তাদের বেশির ভাগই রাজ্য ছেড়ে চলে গিয়েছে। সেই পুরনো ঐতিহ্য আবার ফিরিয়ে আনতে হবে।”
কলকাতায় এই ‘গ্লোবাল বিজনেস সামিট’-এ যোগ দেওয়ার কয়েক দিন আগে আনন্দবাজার পত্রিকায় এক একান্ত সাক্ষাৎকারে জেটলি পশ্চিমবঙ্গের শিল্প সম্ভাবনা নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন। সেখানে তিনি জানিয়েছিলেন, জমি দিতে না-পারলে শিল্পপতিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে লাভ কী! রাজ্য সরকারের হাতে কত জমি আছে? আর পশ্চিমবঙ্গের শিল্প মানচিত্র বদলে দেওয়ার জন্য কত একর জমি প্রয়োজন? এর পাশাপাশি তিনি বলেছিলেন, “জমি অধিগ্রহণ আইন সংশোধন করে যে অর্ডিন্যান্স আনা হয়েছে, বিরোধী রাজ্যগুলি তার ফায়দা তুলতে না-পারলে উন্নয়নের দৌড়ে তারাই শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে পড়বে।” এ দিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মঞ্চে বসে থাকা জেটলির সামনেই মুখ্যমন্ত্রী সেই সব প্রশ্নের উত্তর দেন। শিল্পপতিদের এ রাজ্যে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এখানে আসুন। শিল্পের জন্য জমি নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। আমাদের জমি ব্যাঙ্ক তৈরি আছে। জমির মানচিত্রও প্রস্তুত। নির্ধারণ করা হয়েছে জমি নীতিও।”
ওই সাক্ষাৎকারে জেটলি জানিয়েছিলেন, তিনি কলকাতায় গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের কাছে এই অনুরোধ করবেন, রাজ্যের স্বার্থেই জমি, বিমা ও কয়লা বিল সমর্থন করুন। কয়লা বিল পাশ হলে রাজ্যের রাজস্ব আদায় বাড়বে। এ দিনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে সে কথা জানিয়েছেন জেটলি। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকেও জেটলি আলাদা করে কয়লা বিলের সুফল নিয়ে বলেন ওই মঞ্চ থেকেই।
জেটলি এ দিন উন্নয়নের জন্য রাজনীতিকে সরিয়ে রাখার আহ্বান জানান। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি জানান, রাজ্যে জনাদেশ গিয়েছে মমতার পক্ষে। দেশে বিজেপি-র পক্ষে জনাদেশ। দুই জায়গাতেই রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছে। মানুষ আশা করেছে এ বার অর্থনৈতিক পরিবর্তনও হবে। নির্বাচনের আগের সেই প্রতিশ্রুতি বজায় রাখার প্রয়োজনের কথা মমতাকে বলেন জেটলি।
এরই পাশাপাশি, তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, “কোন দেশে বা কোন রাজ্যে বিনিয়োগ করবেন তা শিল্পপতিদের বিষয়। নানা দিক বিচার করে তাঁরা সেই সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু, বর্তমানের প্রতিযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় দাঁড়িয়ে প্রত্যেক রাজ্যকে শিল্প টানতে শিল্পপতিদের সঙ্গে দর কষতে হবে। নিজের রাজ্যকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে।” যে রাজ্য যত বেশি সুযোগ সুবিধা দেবে, সেখানেই শিল্পপতিরা বিনিয়োগ করবেন বলে তাঁর মত। রাজ্যগুলিতে বিনিয়োগ হলেই গোটা দেশের আর্থিক উন্নয়ন হবে। সে কারণেই তিনি অর্থমন্ত্রী হিসেবে জানিয়ে দেন, মোদী সরকার সর্বদা সব রাজ্যের পাশেই আছে। পশ্চিমবঙ্গও তার বাইরে নয় বলে জানিয়ে দেন জেটলি। রাজ্যের উন্নয়নে সব রকম ভাবে সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।