Buscar
sábado, 21 de diciembre de 2024 00:21h.

এবার মুকুলকে সিবিআই-তলব

সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে সিবিআই-এর হাতে আগেই গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। তৃণমূলের দুই সাংসদ কুণাল ঘোষ এবং সৃঞ্জয় বসুর পাশাপাশি গ্রেফতার হয়েছেন দলের সহ-সভাপতি রজত মজুমদারও। তার পরেই জল্পনা শুরু হয়, এর পর কে? এরই মধ্যে এই মামলায় সোমবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হল প্রাক্তন রেলমন্ত্রী তথা তৃণমূল সাংসদ মুকুল রায়কে। 

সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে সিবিআই-এর হাতে আগেই গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। তৃণমূলের দুই সাংসদ কুণাল ঘোষ এবং সৃঞ্জয় বসুর পাশাপাশি গ্রেফতার হয়েছেন দলের সহ-সভাপতি রজত মজুমদারও। তার পরেই জল্পনা শুরু হয়, এর পর কে? এরই মধ্যে এই মামলায় সোমবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হল প্রাক্তন রেলমন্ত্রী তথা তৃণমূল সাংসদ মুকুল রায়কে। তিনি কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও সামলেছেন। এ দিন সকালে ফোন করে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুলবাবুকে ডেকে পাঠায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। দলের দু’নম্বর ব্যক্তিকে ডেকে পাঠিয়ে এ বার কার্যত তৃণমূলের পেনাল্টি বক্সে ঢুকে পড়ল সিবিআই।

সিবিআই সূত্রে খবর, এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ মুকুলবাবুকে ফোন করে সিজিও কমপ্লেক্সে দেখা করার কথা বলা হয়। কিন্তু তিনি ওই আধিকারিককে জানান, বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে আপাতত দিল্লিতে ব্যস্ত রয়েছেন। তাই এ দিনই তাঁর পক্ষে দেখা করা সম্ভব নয়। সূত্রের খবর, কবে সিবিআই দফতরে এসে দেখা করবেন, তা দু’-এক দিনের মধ্যে ফোন করে জানিয়ে দেবেন মুকুলবাবু। তাঁকে এই বিষয়ে চিঠিও পাঠানো হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রের খবর। মুকুলবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, চিঠি পাননি, তবে যখনই তাঁকে ডাকা হবে তিনি যেতে তৈরি।

তাঁকে যে ডাকা হতে পারে, তা নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই জল্পনা চলছিল। সিবিআই-এর হাতে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র গ্রেফতার হওয়ার পর সেই জল্পনা আরও তুঙ্গে ওঠে। সারদা কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পরেই তৃণমূলের প্রথম সারির একাধিক নেতার দিকে অভিযোগের আঙুল ওঠে। তাঁরা প্রত্যেকেই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেশ ঘনিষ্ঠ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩-র ৩ মে ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে দলীয় এক সভায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কুণাল চোর! মদন চোর! টুম্পাই চোর! মুকুল চোর! আমি চোর!” ওই দিন মমতা তাঁর তালিকায় যাঁদের নাম নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন, তাঁদের তিন জনই এই মামলায় আপাতত জেলে রয়েছেন। চতুর্থ জন অর্থাৎ ‘মুকুল’কে এ দিন ডেকে পাঠিয়েছে সিবিআই। রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি রাহুল সিংহ এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “প্রত্যাশিত ছিল যে, মুকুলবাবুকে সিবিআই ডাকবে। সারদার মালিকের সঙ্গে তাঁর নিবিড় যোগাযোগ ছিল।” এর পরেই রাহুলবাবুর সংযোজন, “মুখ্যমন্ত্রী যে পাঁচ জনের নাম বলেছিলেন, তাতে তো মুকুলের নাম ছিল!”

মমতার পাশাপাশি আরও এক জন একটি তালিকা সম্প্রতি প্রকাশ্যে এনেছিলেন। গত ৩০ নভেম্বর ধর্মতলার এক সভায় বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ ঘোষণা করেছিলেন, “২০১৪-য় ভাগ মদন ভাগ, ২০১৫-য় ভাগ মুকুল ভাগ আর ২০১৬-য় ভাগ মমতা ভাগ।” এর কয়েক দিন পরেই গত ১২ ডিসেম্বর সিবিআই-এর হাতে গ্রেফতার হন রাজ্যের মন্ত্রী মদন মিত্র। এর পরেই শোরগোল পড়ে যায়। তবে কি ২০১৫-য় মুকুল? ওঠে এমন প্রশ্নও। এ দিন সিদ্ধার্থনাথ বলেন, “সুদীপ্ত সেন কাশ্মীর পালানোর আগে যাঁর সঙ্গে শেষ দেখা করেছিলেন, তাঁর নাম মুকুল রায়। কাজেই সিবিআই তো তাঁকে ডেকে পাঠাবেই। আমি বলেছিলাম, ২০১৫-য় ভাগ মুকুল ভাগ। এখন দেখুন কী হয়!”

মমতা এবং সিদ্ধার্থের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী এ বার যে মুকুলেরই পালা, তা স্বীকার করে নিয়েছেন বিরোধী শিবিরের অনেক নেতাই। ঘটনায় যে কোনও চমক নেই তাও তাঁরা জানিয়েছেন। কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান যেমন বলছেন, “আমরা অবাক হইনি। অবাক হওয়ার কিছু নেই। বৃহত্তর এই ষড়যন্ত্রে তৃণমূলের অনেক রথী-মহরথী জড়িত আছেন। এখন তাঁরা গ্রেফতারের অপেক্ষায়।” তিনি আরও বলেন, “কান টানা হয়েছে। মাথা কবে ধরা পড়ে লুণ্ঠিত মানুষ এখন সেই দিনটার অপেক্ষায়।” তাঁর আঙুল মমতা-সিদ্ধার্থের দেওয়ার তালিকার শেষ নামটির দিকেই!

অবাক নন আইনজীবী তথা কংগ্রেসের আর এক নেতা অরুণাভ ঘোষ। তাঁর মতে, কুণাল ঘোষ থেকে শুরু করে আসিফ খান, এমনকী সৃঞ্জয় বসুও সিবিআই জেরায় মুকুলবাবুর কথা বলেছেন। কাজেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে এই মামলায় তাঁকে ডাকতেই হত। তাঁর কথায়, “আসিফ ছিল মুকুলের ডান হাত। সে সিবিআইকে যে তথ্য দিয়েছে, তাতে মুকুলের সঙ্গে গোয়েন্দারা কথা বলতে বাধ্য।” এরই পাশাপাশি তিনি বলেন, “রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেছিলেন, তাঁর নির্বাচনী খরচ হিসেবে দল থেকে ১৬ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল। সেই টাকা কোথা থেকে এসেছিল, তা জানতে চাইতেই পারে সিবিআই।”

এ দিন মুকুলবাবুকে সিবিআই ডাক পাঠানোয় অবাক নয় সিপিএম-ও। দলের নেতা সুজন চক্রবর্তীর মতে, তৃণমূল সুপ্রিমোর আশীর্বাদ নিয়ে মুকুল রায় এ সব করতেন। পাশাপাশি তাঁর প্রশ্ন, “তা হলে কি সাধারণ মানুষকে চিট ফান্ডের মালিকেরা প্রতারণা করেছেন? না কি তৃণমূলের বড় বড় নেতারা?”

তবে মুকুলবাবুকে সিবিআই-এর তলব প্রসঙ্গে তৃণমূল তাদের পুরনো অবস্থানেই রয়েছে। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কলকাতা পুরসভা নির্বাচনের আগে পরিকল্পিত ভাবে সিবিআইকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে বিজেপি। এটা তাদের উলঙ্গ রাজনীতি।” এরই পাশাপাশি তিনি বলেন, “একটা মুকুলকে নোটিশ দিয়ে তৃণমূলকে শেষ করা যাবে না। লক্ষ লক্ষ মুকুল রাস্তায় নেমে বিজেপি-র এই প্রতিহিংসামূলক রাজনীতির প্রতিবাদ করবে।”

Original Link