পাঁচ লাখের হিসেবে এক লাখ বাড়তি
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বিভিন্ন জায়গায় দাবি করছেন, নিজের গড়া কমিশন মারফত তাঁর সরকার সারদা-কাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ লক্ষ মানুষকে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। কিন্তু সারদা কমিশনে নিযুক্ত ছিলেন, এমন অনেক অফিসারই জানাচ্ছেন, মুখ্যমন্ত্রীর তথ্য অতিরঞ্জিত। ওঁদের বক্তব্য: কমিশনের মেয়াদের শেষ দিন পর্যন্ত চেক দেওয়া গিয়েছে বড়জোর ৩ লক্ষ ৯০ হাজার আমানতকারীকে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বিভিন্ন জায়গায় দাবি করছেন, নিজের গড়া কমিশন মারফত তাঁর সরকার সারদা-কাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ লক্ষ মানুষকে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। কিন্তু সারদা কমিশনে নিযুক্ত ছিলেন, এমন অনেক অফিসারই জানাচ্ছেন, মুখ্যমন্ত্রীর তথ্য অতিরঞ্জিত। ওঁদের বক্তব্য: কমিশনের মেয়াদের শেষ দিন পর্যন্ত চেক দেওয়া গিয়েছে বড়জোর ৩ লক্ষ ৯০ হাজার আমানতকারীকে।
অর্থাৎ, কমিশনের হিসেবের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর তথ্যের ফারাক অন্তত ১ লক্ষ ১০ হাজারের! তা হলে দিল্লিতে সংবাদ মাধ্যমের সামনে বা কলকাতা-কল্যাণীর সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বললেন, তার ভিত্তি কী?
সারদা কমিশনের ওই আধিকারিকদের ব্যাখ্যা, প্রায় ৫ লাখ চেক কাটা হয়েছিল ঠিকই। তবে লোকসভা ভোট এসে যাওয়ায় নির্বাচনী বিধির গেরোয় বিস্তর চেক বিলি করা যায়নি। পাশাপাশি বেশ কিছু আমানতকারীর নাম-সাকিনের রেকর্ড ঠিকঠাক না-থাকায় এবং পুলিশের অসহযোগিতার কারণেও বহু চেক প্রাপকদের হাতে পৌঁছায়নি। বঞ্চিত এমন প্রাপকের সংখ্যা অন্তত ১ লক্ষ ১০ হাজার। তাঁদের না-পাওয়া টাকার অঙ্ক সব মিলিয়ে ১০৩ কোটি। অফিসারেরা জানিয়েছেন, সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় ওই সব চেক কমিশনে ফেরত আসে। এই মুহূর্তে টাকাটা কমিশনের অ্যাকাউন্টেই জমা রয়েছে। টাকার গতি কী হবে?
বিচারপতি শ্যামলকুমার সেনের নেতৃত্বে গঠিত সারদা কমিশনের বিভিন্ন পদে কাজ করে আসা অফিসারেরা জানিয়েছেন, চেকগুলি বাতিল করে সংশ্লিষ্ট প্রাপকদের নামে নতুন চেক তৈরির কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু কমিশনের মেয়াদ না-বাড়ায় প্রক্রিয়াটি মাঝ পথে থেমে গিয়েছে। ফলে প্রাপক-তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও লক্ষাধিক প্রতারিত আমানতকারীর হাতে এখনও ক্ষতিপূরণের টাকা পৌঁছায়নি। “মুখ্যমন্ত্রীর হিসেবে এটা ধরা নেই বলেই বোধহয় উনি পাঁচ লক্ষ চেক বিলির তথ্য দিয়েছেন।” মন্তব্য এক আধিকারিকের। ওঁদের ধারণা, সঠিক পরিসংখ্যান জুগিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ‘ভুল’ ভাঙানোর সাহস ভারপ্রাপ্ত অফিসারদের হয়নি।
এমতাবস্থায় আমানতকারীরা বিভ্রান্ত। যেমন উত্তর কলকাতার বাসিন্দা শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায়। উনি জেনেছেন, তাঁর নামে ক্ষতিপূরণের চেক তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হাতে পাননি। শুভাশিসবাবু বলছেন, “সারদায় আমার দশ হাজার টাকা মার গিয়েছে। কমিশনে গিয়ে শুনেছিলাম, আমার নামে চেক কাটা হয়েছে। এখনও পাইনি। শুনেছি, নির্বাচনী বিধির কারণে চেক বিলি করা হয়নি।” তা হলে ভোট-পর্ব মিটে যাওয়ার পরে চেক দেওয়া হল না কেন?
অফিসার-সূত্রের খবর: চেকের মেয়াদ তিন মাস। ভোট যত দিনে মিটেছে, তত দিনে চেকও তামাদি হয়ে গিয়েছে। সে কারণেই নতুন করে চেক লেখার কথা ছিল। সারদা কমিশন পাট গুটোনোয় যা আপাতত বিশ বাঁও জলে। আধিকারিকদের অবশ্য দাবি, তখন সরকারের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে, কমিশনের মেয়াদ শেষ হলেও সরকারের পক্ষ থেকে ওই টাকা যথাস্থানে পৌঁছে দেওয়া হবে। টাকা ফেরত নিয়ে সরকার কী ভাবছে?
নবান্নের এক অর্থ-কর্তার জবাব, “এক মাস হল, সারদা কমিশন বন্ধ হয়েছে। তাই এখনই বলা যাচ্ছে না, টাকা কবে দেওয়া হবে।” চেক কোনও দিন হাতে পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে ভুগছেন শুভাশিসবাবুর মতো হাজারো আমানতকারী। সারদা কমিশন ঝাঁপ ফেলেছে ২২ অক্টোবর। ২১ অক্টোবর কমিশন-সূত্রে জানানো হয়, ২০১৪-র ২৩ এপ্রিল কমিশন চালু হওয়া ইস্তক টাকা ফেরত চেয়ে মোট সাড়ে ১৭ লক্ষ আবেদনপত্র জমা পড়ে। এঁদের মধ্যে সাড়ে ১২ লক্ষ আমানতকারী সারদায় টাকা রেখেছিলেন। সিদ্ধান্ত হয়, শুধু তাঁদেরই ক্ষতি পূরণ করা হবে। পাঁচ দফায় মোট ৪ লক্ষ ৯৮ হাজার ৩৪৫ জন আমানতকারীর নামে চেক তৈরি হয়।