চাচার ঐতিহ্য নিয়ে সম্পর্ক উন্নয়ন
শৈশবে চাচার কাছে গল্প শোনার বায়না করতেন ভাইপো। বাবার কাছে অনুযোগ করতেন, চাচা কেন এত দূরে থাকেন? এই দূরত্ব ঘোচানোর খোয়াইশেই বার্লিনের উলান্ড-স্ট্রাসের কাছে হিন্দুস্তান হাউসের রেস্তোরাঁয় বসে মজার গপ্পোগুলি একটি-দু’টি করে লিখে ফেলেছিলেন চাচা সৈয়দ মুজতবা আলি। যা আজও রসিকের কাছে অমর।
শৈশবে চাচার কাছে গল্প শোনার বায়না করতেন ভাইপো। বাবার কাছে অনুযোগ করতেন, চাচা কেন এত দূরে থাকেন? এই দূরত্ব ঘোচানোর খোয়াইশেই বার্লিনের উলান্ড-স্ট্রাসের কাছে হিন্দুস্তান হাউসের রেস্তোরাঁয় বসে মজার গপ্পোগুলি একটি-দু’টি করে লিখে ফেলেছিলেন চাচা সৈয়দ মুজতবা আলি। যা আজও রসিকের কাছে অমর।
আর আজ সরকারি ভাবে দিল্লিতে বাংলাদেশের হাই কমিশনারের দায়িত্ব নিয়ে সেই ভাইপো সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলি জানাচ্ছেন, তাঁর চাচা মুজতবা আলির স্মৃতিবিজড়িত এই দেশে এসে তিনি তৃপ্তি পাচ্ছেন। ফেসবুকে ‘মুজতবা আলি ফ্যান ক্লাব’-এর অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মুয়াজ্জেম। এই ক্লাবে ভক্তের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। তাঁর কথায়, “বাবার কাছে গল্প শুনেছি ভাষা আন্দোলনে একটি বড় ভূমিকা ছিল চাচার। মুক্তিযুদ্ধের ২৫ বছর আগে একটি প্রকাশ্য সম্মেলনে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানে উর্দুকে জোর করে চাপিয়ে দিলে প্রবল আন্দোলন হবে। ২৫ বছর পর তাঁর কথা মিলে যায়।” স্মৃতিতে ডুব দিয়ে বললেন, “নাইনে ব্রিটিশ স্কুলে পড়ার সময়েই অপমানিত হয়ে মুজতবা আলি স্থির করেন, পরবর্তী পর্যায়ে শান্তিনিকেতনে পড়বেন। তার পর জার্মানিতে পাড়ি জমিয়ে সেখানকার ভাষা শিক্ষা শুরু করেন।”
কূটনীতিক হিসাবেও চাচার আদর্শ ভাইপো মুয়াজ্জেমকে অনুপ্রাণিত করে। বিনীত ভাবে জানাচ্ছেন, “বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে পাকিস্তান দূতাবাসের অফিসার হিসাবে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ছিলাম। সে সময় মুক্তিযুদ্ধে আমারও কিছু অবদান ছিল।” সেই সুবাদেই ভারতকে চিরকাল বন্ধু রাষ্ট্র হিসাবে ভেবে এসেছেন মুয়াজ্জেম। এই দেশ তাঁর অপরিচিত নয়। এর আগে ১৯৮৬ থেকে ৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি নয়াদিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাসে ছিলেন কূটনৈতিক পদে। বাংলাদেশের বিদেশসচিব হিসাবে অবসর নিয়েছেন দীর্ঘদিন। “এমন একটা সময়ে আবার ডেকে পাঠিয়েছে সরকার, যখন ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক ক্রমশ উন্নত হচ্ছে,” জানাচ্ছেন মুয়াজ্জেম।
নিরাপত্তা যে এখন দু’দেশের কাছেই অগ্রাধিকার, এ কথা জানাচ্ছেন নতুন বাংলাদেশি হাই কমিশনার। আজ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে পরিচয়পত্র জমা দিয়ে তাঁর সঙ্গে একটি বৈঠক করেছেন। জানালেন, “ভারত-বিরোধী জঙ্গি ঘাঁটিগুলি দমনে শেখ হাসিনা যে ব্যবস্থা নিয়েছেন, আজ তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ভারতীয় রাষ্ট্রপতি।” আঞ্চলিক সহযোগিতা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ানোর পাশাপাশি যে বকেয়া বিষয়গুলি রয়েছে সে সম্পর্কেও নয়াদিল্লির কাছ থেকে ইতিবাচক বার্তা পাওয়া যাচ্ছে বলেই আশা প্রকাশ করছেন মুয়াজ্জেম। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তাঁর বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা তিস্তা চুক্তি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও যথেষ্ট ইতিবাচক সঙ্কেত পাঠাচ্ছেন। তাঁর কথায়, “তিস্তা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আলাপ আলোচনা চলছে। আমরা ইতিবাচক খবরই পাচ্ছি। আশা করছি এই সমস্যার সুরাহা হবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যে সংসদীয় প্রতিনিধি দলটি সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন, তাঁদের কাছে এ ব্যাপারে ইতিবাচক বার্তাই দিয়েছেন তিনি। তার পরে পশ্চিমবঙ্গ সরকার স্থলসীমা চুক্তি নিয়ে আপত্তি প্রত্যাহার করেছে বলে খবর পেয়েছি। সব মিলিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনোভাব বেশ ইতিবাচক বলে আমাদের মনে হচ্ছে।”
আগামী ১৮ তারিখ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ভারত সফরে আসছেন। নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। তার পর আগরা ও অজমেঢ় শরিফ সফর শেষ করে ২২ তারিখ তাঁর কলকাতা এবং শান্তিনিকেতন যাওয়ার কথা। এই সফরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও বৈঠক হতে পারে আব্দুল হামিদের। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর নামে একটি চেয়ার ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়েছেন, তাঁর ইচ্ছা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এসে এটির উদ্বোধন করুন। এই নিয়েও মমতার সঙ্গে কথা হতে পারে হামিদের।