উত্তর-পূর্বের জন্য এক গুচ্ছ প্রকল্প মোদীর
ত্রিপুরা-সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো আর পিছিয়ে থাকবে না৷ এই উদার আশ্বাস শুনিয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর মোদি৷ সোমবার ত্রিপুরার গোমতী জেলার পালাটানায় ও এন জি সি-র প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিট আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে তিনি দেশবাসীকে উৎসর্গ করেন৷ ২০১৩-র ২০ জুন এই প্রকল্পের প্রথম ইউনিটটি উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি৷ ........................
ত্রিপুরা-সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো আর পিছিয়ে থাকবে না৷ এই উদার আশ্বাস শুনিয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর মোদি৷ সোমবার ত্রিপুরার গোমতী জেলার পালাটানায় ও এন জি সি-র প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিট আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে তিনি দেশবাসীকে উৎসর্গ করেন৷ ২০১৩-র ২০ জুন এই প্রকল্পের প্রথম ইউনিটটি উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি৷ প্রতি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ৩৬৩.৩ মেগাওয়াট করে৷ মোট ক্ষমতা ৭২৬.৬ মেগাওয়াট৷ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তম গ্যাস-বিদ্যুৎ প্রকল্প৷ প্রধানমন্ত্রীও জানান, পূর্বোত্তরে বিদ্যুতের জন্য এটাই ‘সর্ববৃহৎ পুঁজি বিনিয়োগ’৷ প্রসঙ্গত, প্রকল্পের অতিকায় সব যন্ত্রপাতি এসেছে বিদেশ থেকে৷ বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর, আশুগঞ্জ নদীবন্দর এবং সড়কপথ হয়ে৷ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে, বিশেষত ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের আগ্রহ এবং অনুরোধে উপস্হিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা তৌফিক ই ইলাহি চৌধুরি এবং শক্তি ও খনিজ সম্পদের রাষ্ট্রমন্ত্রী নজরুল হামিদ৷ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, ত্রিপুরার বিদ্যুৎমন্ত্রী মানিক দে এবং খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদিও এ জন্য বাংলাদেশের ঋণ স্বীকার করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন৷ কয়েক বছর ধরেই এই প্রকল্প থেকে বাংলাদেশকে অম্তত ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেওয়ার ব্যাপারে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলছিল ত্রিপুরা সরকার৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগরতলা সফরকালেও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়৷ মুখ্যমন্ত্রী সোমবার বলেন, বাংলাদেশের সার্বিক সহায়তা ছাড়া পালাটানা প্রকল্প করা প্রায় অসম্ভবই ছিল৷ প্রধানমন্ত্রী মোদি উদ্বোধন মঞ্চেই প্রায় ৫০ হাজার লোকের জমায়েতে ঘোষণা করেন, বাংলাদেশ কিনতে চাইলে ভারত এখান থেকে তাদের বিদ্যুৎ দেবে৷ প্রসঙ্গত, ত্রিপুরার দৈনিক গড় বিদ্যুৎ-চাহিদা এখন মাত্র ২৫০-৬০ মেগাওয়াট৷ পালাটানার প্রথম ইউনিট চলছে৷ দ্বিতীয় ইউনিট এদিন উদ্বোধন হলেও বাণিজ্যিক উৎপাদন জানুয়ারি থেকে৷ পূর্বোত্তরের ৭ রাজ্যই এখান থেকে বিদ্যুৎ পাবে৷ শিগগিরই পশ্চিম ত্রিপুরার মনারচকে চালু হচ্ছে নিপকো-র ১০৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরেকটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প৷ মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, কিন্তু ত্রিপুরার ভূগর্ভে সঞ্চিত অফুরম্ত গ্যাস-ভাণ্ডার আমরা শুধু বিদ্যুতের জন্য আর পোড়াতে চাই না৷ ত্রিপুরায় দ্রুত একটি গ্যাসভিত্তিক ইউরিয়া সার কারখানা এবং একটি মাঝারি আকারের পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্স গড়ে এ রাজ্যের বেকারদের কাজের সুযোগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেন, আমরাও চাইব এগুলি হোক৷ বলেন, গত তিন দিন আমি উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভ্রমণ করছি৷ মনে হয় আর কোনও প্রধানমন্ত্রীর এক সঙ্গে এতটা সময় এখানে থাকার সৌভাগ্য হয়নি৷ উত্তর-পূর্বের দ্রুত বিকাশের জন্য চাই শক্তি, গতি এবং দিশা৷ সফরের শুরুতে মেঘালয়ে রেল উদ্বোধন এবং শেষে এখানে বিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্বোধনকে ইঙ্গিত করেন তিনি৷ বলেন, প্রতিবেশী দুই দেশ এক সঙ্গে উদ্যোগ নিলে কী হতে পারে, পালাটানা প্রকল্প তার দৃষ্টাম্ত৷ তেমনি রাজ্যগুলির মধ্যেও সহযোগিতার দৃষ্টাম্ত এটা৷ সম্প্রতি সার্ক বৈঠকেও সিদ্ধাম্ত হয়েছে, এই অঞ্চলের সব দেশ এনার্জি ক্ষেত্রে পরস্পরকে সহযোগিতা করবে৷ বিশ্বের গ্রিন এনার্জির মানচিত্রে ত্রিপুরা জায়গা করে নিয়েছে৷ তিনি জাপান সফরে গিয়ে সম্পাদিত চুক্তির উল্লেখ করে জানান, পূর্বোত্তরের উন্নয়নে জাপানের সাহায্য নেওয়া হবে৷ ভবিষ্যতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলই হবে এশিয়ার প্রবেশদ্বার৷ এর রেল-সড়ক যোগাযোগ উন্নত করা হবে৷ পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেন তিনি৷ অনুষ্ঠানে ছিলেন রাজ্যপাল পি বি আচারিয়া, সাংসদ শঙ্কর দত্ত, ও এন জি সি-র কর্মকর্তারা৷ প্রধানমন্ত্রী পালাটানা থেকে হেলিকপ্টারে আগরতলা এসে রাজ্য মন্ত্রিসভার সঙ্গে বৈঠক করেন৷ সেখানে রাজ্যের উন্নয়নের একগুচ্ছ দাবি তাঁর হাতে তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ ফিরে যাওয়ার আগে রাজ্য বি জে পি নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন নরেন্দ্র মোদি৷ সি পি এম-সহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন দেখা করার অনুমতি চেয়ে পায়নি৷ সরকারি সফরে এসে কেবল নিজ দলের সঙ্গে বৈঠক করাকে ‘অশোভন ও অগণতান্ত্রিক’ বলেছে সি পি এম৷ অপরদিকে পশ্চিমবঙ্গে ‘সি বি আই-কে দিয়ে হেনস্হা’ করার প্রতিবাদে রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কুশপুতুল পুড়িয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ তারা ত্রিপুরায় দুর্নীতির অভিযোগের সি বি আই তদম্তও চেয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী এদিন রাজ্যে ছিলেন ঘণ্টা তিনেক৷ সন্ধের আগে তিনি বিশেষ বিমানে দিল্লি ফিরে যান৷